
কেশবপুর পৌরসভার বিশেষ প্রকল্পের আওতায় ৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যায়ে শহরের খ্রিস্টান মিশন থেকে ১৩৩৯ মিটার আরসিসি সড়কের কাজ শেষ না হতেই এক অংশ ধসে পড়েছে। গত ২০ মে সড়কের প্যালাসাইটিং কাজ শেষ করে আরসিসি ঢালাইয়ের ৮০ ভাগ কাজ শেষ করে তার উপর কচুরিপানা দেয়া হয়। এর ১০ দিনের মাথায় গত ৩১ মে ৫০ মিটার প্লাসাইটিংসহ সড়কের একটি অংশ ধসে পড়েছে।
সুত্র জানায়, নগর শাসন উন্নয়ন বিশেষ প্রকল্পের আওতায় চারটি প্যাকেজে কেশবপুর পৌরসভায় প্রায় ৪৯ কোটি টাকা ব্যায়ে অবাকাঠামো উন্নয়ন কাজ চলছে। এসব কাজে নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার করার অভিযোগ উঠায় পৌর প্রশাসক মাঝে মধ্যে কাজ বন্ধ করে দিলেও কিছুদিন পর আবার একই ভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদার।
পৌরসভার সুত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের অধীন এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক ও উন্নয়ন সংস্থা এএফডি ব্যাংলাদেশ সরকার এর বিশেষ বরাদ্ধের আওতায় নগর শাষন ও অবকাঠামো প্রকল্পের আওতায় কেশবপুর পৌরসভায় চারটি প্রকল্পে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়। যার টেন্ডার আইডি নং- ৯০৫১৩২। চলতি মাসের প্রথম দিকে কাজ শুরু করে একই বছরের একই অর্থ বছরের জুলাই আগস্টের দিকে কাজ শেষ করার কথা।
এই প্রকল্পের অধীন পৌর শহরে খ্রিস্টান মিশন থেকে ভোগতিনরেন্দ্রপুর গ্রামের সাবেক মেয়র রফিকুল ইসলামের পুকুর পাড় পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়ক নির্মানে ৩ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়। এ প্যাকেজের আওতায় ড্রেন ও কালভার্ট নির্মানের কাজও রয়েছে। সড়কে আর সিসি ঢালাই দেওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় ভোগতি গ্রামের সাহেবালি খানের পুকুর পাড় প্লাসাইটিংসহ ৫০ ফুট নিয়ে সড়কের এক অংশ ধসে পড়েছে।
পৌরবাসীর অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার আবু সাঈদ চারটি প্যাকেজের কাজ সিডিউর অনুযায়ী না করে এ প্রকল্পের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অতি নিম্নমানের ইটের খোয়া, ২ নং ইট, সাদা ডাস পাথর এবং মাটি মিশ্রিত ডিট বালু ব্যবহার করছেন। ফলে সড়কসহ সকল অবকাঠামো নির্মান কাজে ফাটলসহ ঢালাইয়ের পাথরসহ খোয়া উঠে যাচ্ছে। এছাড়া ঢালাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সিমেন্টও ব্যবহার করা হচ্ছে না বলে পৌরবাসীর অভিযোগ। এরই মধ্যে থানার মোড় থেকে বায়সা মসজিদ পর্যন্ত এক কিলোমিটার আরসিসি সড়ক, মধ্যকুল আরসিসি সড়ক, গোহাটার পাশে আরসিসি সড়কে ফাটল দেখা দিয়েছে। যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে। এদিকে, সমপরিমান কাজ না করেও ওই ঠিকাদারকে অতিরিক্ত বিলও দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।
সুত্র আরো জানায়, প্রত্যেকটি প্রকল্পের সামনে সাইনবোর্ড টানানোসহ কাজের তথ্য প্রকাশ করার কথা থাকলেও তা গোপন রাখা হয়েছে। প্রকল্পের তথ্য চাইলে পৌরসভার কর্মকর্তারা এবং মিউনিসিপাল ইঞ্জিনিয়ার একে অপরকে দেখিয়ে দিচ্ছেন। চারটি প্যাকেজের নির্মান কাজে একেবারে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় পৌরবাসী একাধিকবার পৌর প্রশাসককে জানালে তিনি এসব কাজে তদারকি বাড়াবেন বলে জানান।
ভোগতি ও মধ্যকুল গ্রামের সাহেব আলী, ইসলাম , মাসুদ সরদার জানান, ভোগতি ও মধ্যকুল তেলপাম্প পর্যন্ত আরসিসি সড়ক নির্মানে ৩ নং ইটের খোয়া, ২ নং ইট,মাটি সিশ্রিত বালি, ও ডাস্ট পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া ৭ ইন্চি পুরু করে ঢালাই দেওয়ার কথা থাকলেও ৩ থেকে ৫ ইন্চি ঢালাই দেয়া হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়নি। ফলে কয়েক মাস যেতে না যেতেই সড়কটি ভেঙ্গে পূর্বের চেহারায় ফিরে আসবে। তারা এব্যাপারে তদন্তের দাবি জানান।
পৌরবাসী চারটি প্যাকেজে ৪৬ কোটি টাকার বাস্তবায়িত প্রকল্পের কাজগুলি তদন্ত পূর্বক ঠিকাদারসহ এরসাথে অনিয়মে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান।
এ প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে থাকা ঢাকার মিউনিসিপাল ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল্লা বলেন, সঠিকভাবে কাজের তদারকি করা হচ্ছে। যেখানে সমস্যা সেখানে ঠিকমত কাজ করার জন্য ঠিকাদারকে বলা হচ্ছে।
ঠিকাদার আবু সাঈদ বলেন, সিডিউল অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন বলেন, বিশেষ প্রকল্পের কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠায় তদারকি বাড়ানো হবে। এছাড়া এ কাজে অনিয়ম হলে সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সঠিকভাবে কাজ না হলে কাজের বিল দেয়া হবে না।