বিএনপির প্রস্তাব জ্যৈষ্ঠ কয়েকজন থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ

হাসান আলী
প্রকাশের সময়: বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫ । ১২:০১ পূর্বাহ্ণ

বিতর্কিত নিয়োগ এড়া‌তে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম দুই থে‌কে তিনজন বিচারপতিদের মধ্য থে‌কে প্রধান বিচারপ‌তি নিয়োগের প্রস্তাব ক‌রে‌ছে বিএনপি। জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের সুপারিশ করেছে বিচারব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এতে দ্বিমত জানিয়েছে বিএনপি।

আজ মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ,জাতীয় সংসদে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে এ প্রস্তাব করা হ‌য়ে‌ছে ব‌লে জা‌নি‌য়ে‌ছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমেদ।

বৈঠকের মধ্যাহ্ন বিরতিতে সালাহউদ্দীন আহমেদ বলেন, রাষ্ট্রে আগে কিছু অসংগতি দেখা গেছে। সব ক্ষেত্রে যদি নির্দিষ্ট করে দিই, তা রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর হবে না। অন্তত এক‌টি বিকল্প থাকা উচিত। ত‌বে বিএন‌পির প্রস্তাব এখনো গৃহীত হয়‌নি, এখনো আলোচনা চলছে।

নেসেসিটি মেকস ল, মন্তব্য করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা হচ্ছে সর্বোচ্চ আইন। ডকট্রিন অব নেসেসিটি বিবেচনা রেখেই কিছু অপশন রাখা সুবিধা। না হলে রাষ্ট্র এমন কোনো ব্যক্তির হাতে পড়ে যাবে যা রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর হবে না।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মন্ত্রিপরিষদ প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্বে পরিচালিত। কিন্তু ক‌মিশন বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা কর্তৃক সরকার পরিচালিত হ‌বে। তাতে এখানে প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্ব থাকে না। প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্ব থাকা উচিত।

সর্বোচ্চ তিনবার প্রধানমন্ত্রী:
একজন সর্বোচ্চ দুবার প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের এ প্রস্তাবে দ্বিমত জানিয়েছে বিএনপি প্রস্তাবে বল‌ছে, দুবারের পর বিরতি দিয়ে আবারও প্রধানমন্ত্রী হওয়া যা‌বে। তবে রোববার মুলতবি হওয়া বৈঠকে ক‌মিশন প্রস্তাব করে, এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ তিনবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিকল্প প্রস্তাবের জন্য অপেক্ষা করুন। আর ক‌মিশনও প্রস্তাবটি আনুষ্ঠা‌নিকভা‌বে দেয়নি।

তিন পদে প্রধানমন্ত্রী কে না থাকার প্রস্তাবে না:
বলেন, একজন ব্যক্তি যাতে প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান ও সংসদ নেতা পদে না থাকেন, এ নিয়ে আলাপ হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদীয় দ‌লের সিদ্ধান্তে প্রধানমন্ত্রী হন। এটা জরুরি নয়, দ‌লের প্রধান প্রধানমন্ত্রী হবেন। কিন্তু সু‌যোগ রাখা উচিত। আর প্রধানমন্ত্রী যিনি হবেন, তিনিই সংসদ নেতা হবেন। এটাই রী‌তি। কোনো কোনো দেশে পৃথক সংসদ নেতার নজির র‌য়ে‌ছে। কিন্তু সেখা‌নে সংসদ নেতার নির্বাহী ক্ষমতা নেই।

কয়েকটি প্রস্তাবের বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ১৪ জন হবেন, এতে বিএন‌পি একমত। উপদেষ্টামণ্ডলীর রুটিন দা‌য়িত্ব পালন কর‌বে‌, এতে বিএন‌পি একমত। প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করলে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য থেকে একজনকে মনোনীত করা হবে, এ সুপা‌রি‌শেও একমত। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে একমত। স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ করা হবে না, এই ব্যাপারে আমরা সম্পূর্ণ একমত।

আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতি‌রো‌ধের সুপা‌রি‌শেও বিএনপি প্রায় একমত। বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বলতে সশস্ত্র বাহিনীর তিন বিভাগসহ পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত আছে। সুতরাং ঢালাওভাবে শৃঙ্খলা বাহিনীর ক্ষেত্রে একটি বিধান রাখ‌লে, বিশৃঙ্খলা হয়ে যেতে পারে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা: সালাহউদ্দিন আহ‌মেদ বলেন, দ্বিক‌ক্ষের আইনসভা গঠ‌নে বিএন‌পি একমত। উচ্চ কক্ষের নাম সিনেট, নিম্ন কক্ষের নাম জাতীয় সংসদ হ‌বে। নিম্ন কক্ষের ৪০০ আসনের মধ্যে ১০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে, এটা নিয়ে আমরা একমত। তবে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে ভিন্নমত আছে। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধির কথা বলেছি। রাষ্ট্রপতির কা‌ছে কী কী ক্ষমতা অর্পণ করা যায়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া রাষ্ট্রপতি কী কী করতে পারবেন,তা দৃশ্যম্যান রাখা

বিভাগ পর্যায়ে হাইকোর্টের বেঞ্চ প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে বিএনপি:
সালাহউদ্দিন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ নিয়ে কথা হয়েছে। তাদের প্রস্তাব হলো, স্থায়ী বেঞ্চ যেন বিভাগগুলোতে করা হয়। আপনারা জানেন যে অষ্টম সংশোধনী ছিলো সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের সময়এ
সুপ্রিম কোর্টের বিকেন্দ্রীকরণের জন্য যে বিধান আনা হয়েছিল সংবিধানে সেটা চ্যালেঞ্জ অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বেঞ্চ সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে যায় না ও সাংঘর্ষিক। যেহেতু এটার বিষয়ে বাতিল করে এটা জাজমেন্ট আছে, সে জন্য আমরা বলেছি, সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের জন্য আর্টিক্যাল ১০০ এ প্রভিশন আছে
জুডিশিয়ারিকে যেন আমরা এখানে কনস্টিটিউশনে একটা প্রভিশন করতে পারি /সাব-সেকশন করতে পারি ওখানে যাতে প্রতিবছর প্রয়োজনীয় সংখ্যক সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের জন্য এখানে একটা বাধ্যবাধকতা আরোপ করা যায়।

তিনি বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট / জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশন একটা প্রস্তাব কমিশন করেছে। আমরা এটার বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়ে বলেছি, এটা সংসদে আলোচনা করতে হবে। সংবিধানে একটা নতুন প্রভিশন যুক্ত করা প্রয়োজন হবে, যাতে সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্টের নিয়োগের ক্ষেত্রে কী কী বিধিবিধান করতে হবে।
সালাহউদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, আমরা বিচার বিভাগের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ। কিন্তু সবকিছু আমরা আইনি ও সাংবিধানিকভাবে করতে চাই। বিচারক নিয়োগের যোগ্যতায় ঐকমত্য কমিশন প্রস্তাব করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপককেও যাতে বিচারক নিয়োগ করা যায়।

তিনি বলেন, আমরা বলেছি, বিষয়টি প্রস্তাবিত আইন আছে অথবা এখন বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ যে আইনটা করার চেষ্টা করছি, যেটা এখন হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জড রয়েছে বিভিন্ন কারণে; সেটা নিষ্পত্তি হলে তখন আইনে করা যাবে। তবে আমরা এ বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত।’

গণভোট:  সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা আগেও বলেছি, গণভোট সব বিষয়ে হবে না। সংবিধান সংশোধনের কিছু আর্টিক্যাল থাকে মানে মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রে আর্টিক্যাল ৮, ৪৮, ৫৬ এবং ১৪২ যাতে সংবিধান সংশোধনীর বিভিন্ন উপায় বলা আছে। এগুলো পরিবর্তনে আওয়ামী লীগ সরকার গণভোট বাতিল করে দিয়েছিল। পরে কোর্টে রায়ের মাধ্যমে ১৫তম সংশোধনী যেটাকে চ্যালেঞ্জ হয়েছে। গণভোটকে রি-ইস্টিড করা হয়েছে। সেই বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে গণভোট হওয়া উচিত নই

তিনি বলেন, তবে আমরা প্রভিশন রেখেছি, আমরা প্রস্তাব রেখেছি যে, ভবিষ্যতে সংসদ যদি আরও কোনো আর্টিক্যালের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গণভোটের বিধান রাখতে চায়, সেটা ভবিষ্যতের বিষয়।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দলে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাঈল জবিউল্লাহ, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সাবেক সচিব আবু মো. মনিরুজ্জামান খান ছিলেন।

জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক আলী রীয়াজ এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন। কমিশন সদস্যদের বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, বিচারপতি এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

সম্পাদক: মনজুর আলম, প্রকাশক: আমিন উদ্দীন ।  কপিরাইট © প্রথম সকাল কর্তৃক সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত

প্রিন্ট করুন